মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সাধারণ জ্ঞান (১০০% কমন)
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, সরকারি নিয়োগ, বিসিএসসহ সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্ন এসে থাকে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ইতিহাস ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
আজকের এই পোস্টে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পোস্টটি ভাল লাগলে বুকমার্ক করে রাখতে পারেন অথবা কমেন্টে জানাতে পারেন।
জাতীয় পরিষদের নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি
১৩ ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া বললেন, আগামী ৩রা মার্চ অধিবেশন বসবে। ১লা মার্চ, ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া বলেন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। ২রা মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে আ.স.ম. আব্দুর রবের নেতৃত্বে প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়।
স্বাধীনতার ইশতেহার
একাত্তরের ১লা মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর ভিপি আসম আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন এই চার নেতার বৈঠকের সিদ্ধান্তে "স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ" গঠন করা হয়। একাত্তরের ৩রা মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে পল্টন সমাবেশে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। এতে পূর্ব পাকিস্তানকে "স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ" এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করা হয়।
এডমিশন টিউন এক্সক্লুসিভ
৭ জন বীর শ্রেষ্ঠ কে কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন ও তাঁদের নাম মনে রাখার টেকনিক
আজ হাজারো মোম এর নূর জ্বলে
সেক্টরঃ ১, ৪, ৭, ১০, ২, ০, ৮ (বাংলাদেশের আয়তন এক লক্ষ ৪৭ হাজার এর সাথে মিল রেখে উপরের সংখ্যাটিকে মনে রাখতে পারেন ১ কোটি ৪৭ লক্ষ ১০ হাজার ২০৮)
আজ= আব্দুর রউফ (১)
হা= হামিদুর রহমান (৪),
জা= জাহাঙ্গীর (৭),
রো= রুহুল আমিন (১০),
মো= মোস্তফা কামাল (২),
ম= মতিউর রহমান (০- কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেননি),
নূ= নূর মোহাম্মদ (৮)।
৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত ১৮ মিনিটের এক ঐতিহাসিক ভাষণ। উক্ত ভাষণটি ছিল বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতির আহ্বান। উল্লেখ এই দিনেই প্রায় ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখা হয় "বাংলাদেশ"। ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবরে ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে "ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ" (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের 'নিউজউইক' ম্যাগাজিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে "রাজনীতির কবি" হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এই ভাষণকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ১৮৬৩ সালের বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণ এর সঙ্গে তুলনা করা হয়। ছয় দফা কর্মসূচিকে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়। ৭ই মার্চের ভাষণের মূল বিষয়বস্তু ছিল চারটিঃ-
- সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া
- সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো
- গণহত্যার তদন্ত করা
- নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর
অপারেশন সার্চ লাইট
১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ জেনারেল আইয়ুব খানের পতন ঘটলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন ইয়াহিয়া খান; মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি বলেন, “লোকটি (বঙ্গবন্ধু) এবং তার দল (আওয়ামী লীগ) পাকিস্তানের শত্রু, এবার তারা শাস্তি এড়াতে পারবে না”। ২৫ শে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন ছাত্র কর্মচারী নিহত হয়। পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক বাঙ্গালী জাতির উপর পরিচালিত সাংকেতিক নাম ছিল অপারেশন সার্চ লাইট। এর উদ্দ্যেশ্য ছিল বাঙ্গালী সংগঠিত অস্ত্রধারী এবং সংগঠিত শক্তি ধ্বংস করা।
২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এই অপারেশন সার্চ লাইটে স্বাক্ষর করেন। অপারেশন সার্চলাইট অভিযান শুরুর সময় নির্ধারিত ছিল ২৬ মার্চ রাত ১টা। কিন্তু ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে কোনো ইতিবাচক ফলাফল না পেয়ে সবাইকে সর্বাত্মক সংগ্রামের জন্য তৈরি হওয়ার আহবান জানান। অতঃপর অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় ২৫ মার্চ রাত সাড়ে এগারটা থেকে মধ্য মে পর্যন্ত বড় বড় শহরে অভিযান পরিচালিত হয়। এই অভিযানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন ছাত্র কর্মচারী নিহত হয়। এই রাতেই শুধু ঢাকা শহরে ৬ হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হয়। ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত ১:৩০ টায় / ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ী থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।
স্বাধীনতা ঘোষণা
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন গণহত্যা শুরু করে তখন ধানমণ্ডির ৩২ নং বাড়িতে শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরদিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ তাঁকে বন্দি করে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ দিবাগত রাত সাড়ে বারোটা অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে ততকালীন E.P.R (East Pakistan Rifles) বর্তমান BGB (Border Guards Bangladesh) এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ নেতা জহুর আমহেদ চৌধুরীর (যার নামে চট্রগ্রাম স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়) নিকট একটি বাণী প্রেরণ করেন। বাণীটি ইংরেজীতে ছিল যাতে বিশ্ববাসী ম্যাসেজটি বুঝতে পারে। ম্যাসেজটি ছিলঃ “This may be the Last message from today Bangladesh is Independent”।
স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র[১] ২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে বেলা ২টা ১০ মিনিটের সময় মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান/ এম.এ. হান্নান (তৎকালীন চট্রগ্রাম জেলার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন) বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। হান্নান সাহেব ইংরেজীতেও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরের দিন ২৭ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। শুধু ২৭ শে মার্চ নয়, মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ শে মার্চ সহ ২৮ শে মার্চ ও ২৯ শে মার্চ মোট ৩ দিন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এই ঘোষণাগুলো পূর্বপ্রস্তুতকৃত এবং অনেক আগেই টেপ করে রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়[২]। পৃথিবীতে শুধু মাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র রয়েছে।
নোটঃ ১. এ.কে. খন্দকার (মুক্তিযুদ্ধকালীন বিমান বাহিনী প্রধান) তাঁর বইয়ে আরও যোগ করেন, জিয়াউর রহমান নয়, পূর্ব বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন টেকনিশিয়ান ২৬শে মার্চ প্রথম বেতারে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর, আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এম. এ. হান্নান ২৬শে মার্চ দ্বিতীয়বার বেতারে উক্ত ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর, ২৭ শে মার্চ, চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সমসাময়িক কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান তৃতীয়বারের মত আবারও কালুরঘাট রেডিও স্টেশন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করে এর সমর্থনে বিবৃতি দেন। তবে ১ম বার টেকনিশিয়ান দ্বারা পাঠ করার কথাটি পাঠ্যবই দ্বারা স্বতঃসিদ্ধ নয়।
নোটঃ ২. মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান আবদুল করিম খন্দকার ২০১৪ সালে তার প্রকাশিত স্মৃতিচারণমূলক বই '১৯৭১:ভেতরে বাইরে' - তে লেখেন, শেখ মুজিব ৭ই মার্চ থেকে শুরু করে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত স্বাধীনতার কোন ঘোষণা দিয়ে যান নি, কোন লিখিত চিরকুট বা রেকর্ডকৃত কণ্ঠবার্তাও রেখে যান নি এবং পূর্বনির্ধারিত কোন দিকনির্দেশনাও দিয়ে যান নি, এবং উক্ত মন্তব্য বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়। তাজউদ্দীন আহমেদের কন্যা শারমিন আহমেদ রিপিও তার লেখা "তাজউদ্দীন আহমেদঃ নেতা ও পিতা" গ্রন্থে একই দাবি করেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র
২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে বেলা ২টা ১০ মিনিটে সময় বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে চট্রগ্রাম কালুরঘাটে বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল “স্বাধীনবাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র” পরে তা নামকরণ করা হয় “স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র” নামে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিছু নিয়মিত অনুষ্ঠান হলো পবিত্র কোরআনের বাণী, চরমপত্র, মুক্তিযুদ্ধের গান, যুদ্ধক্ষেত্রের খবরাখবর, রণাঙ্গনের সাফল্যকাহিনী, সংবাদ বুলেটিন, ধর্মীয় কথিকা, বজ্রকণ্ঠ, নাটক, সাহিত্য আসর এবং রক্তের আখরে লিখি।
সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল অনুষ্ঠান এম আর আখতার মুকুল উপস্থাপিত চরমপত্র। এখানে তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অসংলগ্ন অবস্থানকে পুরনো ঢাকার আঞ্চলিক ভাষার সংলাপে তুলে ধরতেন। চরমপত্রের পরিকল্পনা করেন আবদুল মান্নান। আরেকটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান জল্লাদের দরবার পরিচালনা করতেন কল্যাণ মিত্র। অনুষ্ঠানটিতে ইয়াহিয়া খানকে “কেল্লা ফতে খান” হিসেবে ব্যঙ্গাত্মকভাবে ফুটিয়ে তোলা হত। “বজ্র কণ্ঠ” অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণের অংশবিশেষ সম্প্রচার করা হত। বেতার কেন্দ্রে তরুণ শিল্পীরা দেশাত্মবোধক ও অনুপ্রেরণাদায়ক গান করতেন। এর সম্প্রচার বন্ধ হয় ৩০ মার্চ, ১৯৭১ সালে।
মুক্তিফৌজ গঠন / মুক্তিবাহিনী গঠন
৪ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে তৎকালীন সিলেট জেলার (তেলিয়াপাড়া) চা বাগানে (বর্তমানের হবিগঞ্জের মাধবপুরে) কর্নেল এম. এ. জি ওসমানীর এর নেতৃত্বে ৫০০০ সামরিক ও ৮০০০ বেসামরিক মোট ১৩০০০ সদস্য নিয়ে মুক্তিফৌজ গঠিত হয়। বাংলাদেশ ১ম সরকার গঠনের পর ১১ ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিফৌজ নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিবাহিনী’ নামকরণ করা হয়। এখানে বলে রাখা ভাল মুজিব বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী দুইটি আলাদা সংগঠন ছিল। মোহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী হলেন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। তিনি ১২ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মুক্তি বাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মুজিবনগর সরকার গঠন
১০ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের কর্মকান্ড বাংলাদেশ ভূখন্ডের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়েছিল বলে এ সরকার প্রবাসী সরকার হিসেবেও খ্যাত। প্রবাসী সরকারের সদর দফতর ছিল কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে। এই সরকার ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। এই সরকারের মোট সদস্য সংখ্য্যা ছিল ৬ জন। মুজিবনগর সরকার - প্রবাসী সরকার, অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার ও মুজিবনগর সরকার নামেও পরিচিত ছিল। বৈদ্যনাথ তলার নাম মুজিবনগর রাখেন তাজউদ্দীন আহমদ।
৬ জন সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশের ১ম সরকারঃ
১) রাষ্ট্রপতি ও সর্বাধিনায়কঃ শেখ মুজিবুর রহমান
২) অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতিঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম
৩) প্রধানমন্ত্রীঃ তাজউদ্দিন আহমদ[৩]
৪) পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীঃ খন্দকার মোশতাক আহমেদ
৫) অর্থ, বাণিজ্য ও শিক্ষামন্ত্রীঃ মনসুর আলী
৬) স্বরাষ্ট্র, কৃষি, ত্রাণ ও পুর্নবাসনমন্ত্রীঃ এ, এইচ, এম কামরুজ্জামান।
নোটঃ ৩. প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ প্রতিরক্ষা, তথ্য, সম্প্রচার ও যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন এবং অন্যান্য যেসব মন্ত্রণালয় কারও ওপর ন্যস্ত হয়নি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী
শপথ গ্রহণ
১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে তৎকালীন মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ[৪] অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক ইউসুফ আলী, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শপথ করান অতঃপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী সহ অন্য সকল সদস্যদেরকে শপথ পাঠ করান। মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আব্দুল মান্নান। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি ও মুজিবনগরে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে। ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়েছিল।
নোটঃ ৪. অনেক বইতে আছে ১৯ এপ্রিল শপথ পাঠ করানো হয়। তথ্যটি ভুল। (সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া)
মুক্তিযুদ্ধের কমান্ড
মুক্তিযুদ্ধের কমান্ড ছিল পর্যায়ক্রমে (উপর থেকে নিচে)
১) সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমান
২) সহ সর্বাধিনায়ক সৈয়দ নজরুল ইসলাম
৩) প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ
৪) প্রধান সেনাপতি আতাউল গণি ওসমানী
৫) চিফ অব স্টাফ (কর্ণেল আব্দুর রব) – জেড ফোর্স, এস ফোর্স এবং কে ফোর্স; ১-৬ নং সেক্টর
(খ) ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (এয়ারভাইস মারশাল একে খন্দকার)- সেক্টর বাহিনী ৭-১১ নম্বর সেক্টর
মুক্তিবাহিনীর ফোর্স
মুক্তিযুদ্ধকে আর সুচারুভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যে মুক্তিবাহিনীর তিনজন শ্রেষ্ঠ সেক্টর কমান্ডারের নাম অনুসারে তিনটি ফৌজ গঠন করা হয়। নিচে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ
ফোর্সের নাম | অধিনায়ক | সেক্টর |
---|---|---|
জেড ফোর্স | মেজর জিয়াউর রহমান গঠিত হয়ঃ ৭ জুলাই, ১৯৭১ সদর দপ্তরঃ তেলঢারা, তুরা |
১ নং |
কে ফোর্স | মেজর খালেদ মোশারফ গঠিত হয়ঃ ৭ অক্টোবর, ১৯৭১ সদর সপ্তরঃ আগরতলা, ত্রিপুরা |
২ নং |
এস ফোর্স | মেজর কে এম শফিউল্লাহ গঠিত হয়ঃ ১ অক্টোবর, ১৯৭১ সদর দপ্তরঃ হাজামারা |
৩ নং |
বেশিরভাগ সাধারণ জ্ঞান বইয়ে জেড ফোর্সের অধিনায়ক জিয়াউর রহমানকে মেজর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জেড ফোর্স গঠনের সময় তিনি পদোন্নতি পান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে জেড ফোর্সে যোগদান করেন। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনজন ব্যক্তি প্রতিরক্ষা দায়িত্বে ছিলেন, তারা হলেন -
১. মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি - কর্ণেল এম এ জি ওসমানী।
২. মুক্তিযুদ্ধের চিফ অব স্টাফ - কর্ণেল এম এ রব।
৩. মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি ছিলেন - বিমান বাহিনীর প্রধান এ কে খন্দকার।
১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর ৭ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধার পদবী প্রদান করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠের নাম | পদবি | জন্মস্থান | সমাধি |
---|---|---|---|
মুন্সি আব্দুর রউফ | ইপিআর সৈন্য | ফরিদপুর | রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর |
নূর মোহাম্মদ শেখ | ইপিআর ল্যান্স নায়েক | নড়াইল | যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিমপুর গ্রামে |
মতিউর রহমান | বিমান বাহিনীর লেফটেন্যান্ট |
ঢাকা | ঢাকার মিরপুরে |
রুহুল আমিন | নৌবাহিনী স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার |
নোয়াখালী | খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে |
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর | সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন | বরিশাল | চাঁপাইনবাবগঞ্জ - সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণ |
সিপাহী মোস্তফা কামাল | সেনাবাহিনীর সিপাহী | ভোলা | ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মোগড়া গ্রামে |
সিপাহী হামিদুর রহমান | সেনাবাহিনীর সিপাহি |
ঝিনাইদহ | ঢাকার মিরপুরে |
মুক্তিযুদ্ধকালীন বিশ্ব জনমত
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে বাংলাদেশে রক্তপাত বন্ধের জন্য দুজন সিনেট সদস্য আহ্বান জানান। ৩৩টি দেশের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সম্মেলনে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদ পরিবেশন করে ইয়াহিয়া খানকে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানায়।মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ-
সায়মন ড্রিংঃ ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং সর্বপ্রথম পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যার খবর বহির্বিশ্বে প্রকাশ করেন।
এন্থনি ম্যাসকারেহানসঃ তিনি বৃটেনের দ্যা সানডে টাইমসে কর্মরত ছিলেন। পাক বাহিনীর গণহত্যার খবর তিনি ১৩ জুন, ১৯৭১ সালে দ্যা সানডে টাইমস প্রকাশ করেন।
উইলিয়াম মার্ক টালিঃ মুক্তিযুদ্ধকালীন পুরো সময়ে বিবিসি'র এই সাংবাদিক বাংলাদেশের পক্ষে খবর প্রচার করেছিলেন।
দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ কলকাতার আকাশবাণী থেকে প্রচারিত 'সংবাদ পরিক্রমা' তে মুক্তিযুদ্ধের খবর পাঠ করতেন।
কনসার্ট ফর বাংলাদেশঃ ১ আগস্ট ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের গায়ক (অনেক বইতে যুক্তরাষ্ট্র দেওয়া যা ভুল তথ্য) জর্জ হ্যারিসন কনসার্ট ফর বাংলাদেশে 'বাংলাদেশ' গানটি পরিবেশন করেছিলেন। এই কনসার্ট থেকে সর্বমোট ৯ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাছাড়া এই কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন রবি শংকর, ২০১৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পাওয়া গায়ক বব ডিলান ও উপমহাদেশের বিখ্যার সুরসাধক ওস্তাদ আয়াত আলী খান।
মাদার মারিও ভেরেনজিঃ মাদার মারিও ভেরেনজি ইতালির নাগরিক ছিলেন এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন।
এলেন গিনেসবার্গঃ মার্কিন কবি গিনেসবার্গ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অর্থ সংগ্রহের জন্য কবিতা পাঠের আয়োজন করতেন। তাঁর লেখা বিখ্যাত একটি কবিতা হলো 'September on Jessore Road'.
রবি শংকরঃ তিনি কনসার্ট ফর বাংলাদেশের অন্যতম আয়োজক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের নড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন।
জগজিৎ সিং অরোরাঃ তিনি পাক বাহিনীর আত্নসমর্পণের দলিলে যৌথ বাহিনীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন। জন্মসূত্রে তিনি ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।
তাছাড়া চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। পাকিস্তানের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল ৯ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। সেই সময় রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।
বুদ্ধিজীবী হত্যা
পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরগণ দেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সন্তানদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিধান্ত অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে প্রতিযশা ডাক্তার, শিক্ষক, প্রকৌশলীসহ অনেক বুদ্ধিজীবীকে। তাঁদেরকে রায়েরবাজার বশ্যভূমিতে হত্যা করা হয়েছিল।
পেশা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবী হত্যার সংখ্যা
- শিক্ষক - ৯৯১ জন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক - ১৯ জন।
- আইনজীবী - ৪২ জন।
- সাংবাদিক - ১৩ জন।
- চিকিৎসক - ৪৯ জন।
- লেখক, শিল্পী ও প্রকৌশলী - ১৬ জন।
- সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয় - খুলনার চুকনগর এলাকায়।
পাক বাহিনীর আত্নসমর্পণ
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেঃ জেনারেল নিয়াজীর নিকট যুদ্ধ বন্ধ এবং আত্নসমর্পণের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশের পক্ষে আত্মসমর্পণ দলিল তৈরি করেন জ্যাকবা, নাগরা ও কাদের সিদ্দিকী। অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণ দলিল তৈরি করেছিল নিয়াজী, রাও ফরমান ও জামশেদ।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জেনারেল নিয়াজী যৌথ কমান্ডের প্রধান লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নিকট আত্নসমর্পণ করেন। সমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার। বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্নসমর্পণ করে। মোট ৯১ হাজার ৫৪৯ জন সৈন্য নিয়ে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র নারী কমান্ডার ছিলেন আশালতা বৈদ্য।
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরসমূহ
মুক্তিযুদ্ধ সুচারুভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল।কোন কোন সেক্টরে দুইজন আবার কোন সেক্টরে একজন করে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ১১ সেক্টর কমান্ডার ও তাদের সেক্টরের নাম মনে রাখার সহজ উপায়ঃ
জিয়ার খাস দশ বানুর ওজন শূন্যতা
১. জিয়া - জিয়াউর রহমান (১ নং)
২. খা- খালেদ মোশারফ (২ নং)
৩. স - কে এম শফিউল উল্লাহ (৩ নং)
৪. দ - সি আর দত্ত (৪ নং)
৫. শ - মীর শওকত আলী (৫ নং)
৬. বা - উইং কমান্ডার বাশার (৬ নং)
৭. নুর - কাজী নুরুজ্জামান (৭নং)
৮. ও - ওসমান চৌধুরী (৮ নং)
৯. জন- মেজর জলিল (৯ নং)
১০. শূন্যতা - শূন্য (কোনো সেক্টর কমান্ডার ছিলনা) (১০ নং)
১১. তা - কর্নেল তাহের
এই পোস্টটি শেয়ার করুন
খুব সুন্দর ও দরকারি একটি পোস্ট
পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো লাগলো, এই রকম পোষ্ট আরো চাই
ধন্যবাদ আপনাকে। দ্রুতই মুক্তিযুদ্ধের উপর তথ্যবহুল পোস্ট শেয়ার করবো।