মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে?
আপনার মস্তিষ্কের গঠন সম্পর্কে জানুন‒কারণ মস্তিষ্কের ডান আর বাম বলয়ের উপর নির্ভর করে, আপনি কি পারবেন আর কি পারবেন না।ব্রেনের বাম বলয় বিশেষভাবে বিশ্লেষণাত্মক এবং রৈখিক চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বৈজ্ঞানিক, আইনজীবী, হিসাবরক্ষকরা সচরাচর এই ধরনের চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে থাকেন। অন্যদিকে ব্রেনের ডান বলয় সৃজনশীল এবং সামগ্রিক চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। লেখক বা শিল্পীরা এধরনের চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করে থাকেন।
মস্তিষ্ককে জানুন (Know thyself)
যাদের বাম বলয় শক্তিশালী হয়, তারা সাধারণত ভালো ছাত্র হয়ে থাকে। আর যাদের ডান বলয় শক্তিশালী হয়, তারা সৃজনশীল বা অতি-চিন্তাশীল হয়ে থাকে। আমরা দেখে থাকি যে ক্লাসের ভালো ছাত্রদের চেয়ে খারাপ ছাত্রদের মধ্য থেকে নানা সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসে। এরাই নেতৃত্ব দেয় ছাত্র সমাজকে। সেকালে স্কুল
পালানো ছেলেরাই ফ্রান্সকে রক্ষা করেছিল কারণ ডান বলয় প্রেরণা কাজ করে।
এখন প্রশ্ন হল যাদের বাম বলয় (মুখস্থকরণ শক্তি) দুর্বল তারা ডাক্তার হবে বা ৩০ পারা কুরআন মুখস্থ করবে কীভাবে? যেহেতু এদের ডান বলয় ভালো কাজ করে তাহলে শিল্পী, নেতা, লেখক, ব্যবসায়ী হবে। অর্থাৎ কে কী পারবে সেটা অনেক অংশে নির্ভর করে আমাদের মাথার ডান আর বাম বলয়ের উপর। তাহলে অন্যরা আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কীভাবে?
পাড়াতে কোন ঝামেলা হলে, দেখবেন ভালো ছাত্রটা ঘরেই বসে থাকে। এই সমস্যা সমাধান করে পাড়ার সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটা। এর কারণ ডান বলয় যাদের ভালো তাদের সাহস বা প্রেরণাশক্তি বেশি হয়। এরাই পরবর্তীতে নেতা হয়ে যায়।
সাধারণত ভালো ছাত্ররা বিসিএস ক্যাডার হয়। আর খারাপ ছাত্ররা ব্যবসায়ী হয়ে থাকে। কারণ ব্যবসায়ী হতে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়। ডান বলয় যাদের ভালো তাদের সাহস বা প্রেরণাশক্তি বেশি হয়। তাই এরা জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি বা সিন্ধান্ত নিতে পারে। তবে কারো কারো ডান আর বাম বলয় উভয় সমান কাজ করে। এদের সংখ্যা খুবই সীমিত।
লেখক বা শিল্পীদের সাহস বা প্রেরণাশক্তি বেশি হয় বলে অনেক কালজয়ী সৃস্টি জাতিকে উপহার দিতে পারে। যাদের প্রেরণাশক্তি নাই তারা অন্যকে প্রেরণা দিতে লিখবে কীভাবে?
কাজী নজরুল ইসলামের ডান বলয় বা প্রেরণাশক্তি ভালো ছিল বিধায় “বিদ্রোহী” কবিতা লিখেছিল।
মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে রহস্যময় অঙ্গ
অনেকে বলে থাকেন, “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি”
এই প্রবাদটি যদি সত্য হয় তাহলে রিক্সাচালক, কুলি, দিনমজুররা বেশি সফল হতো। সঠিক কথা হল “বুদ্ধিগত পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” ভেবে দেখুন এ পৃথিবীতে যে যত মস্তিষ্ক বা মাথা ব্যবহার করেছেন তিনি ততো সফল হয়েছেন।
মস্তিষ্ক সর্বদা চিন্তাশীল
আমাদের মগজ সপ্তাহে সাত দিন, চব্বিশ ঘণ্টাই সচল থাকে। আর আপনি জেগে থাকুন বা ঘুমিয়ে, আপনার এই অঙ্গটি কিন্তু সারাক্ষণই কাজ করে যাচ্ছে, কাজ মানে চিন্তাভাবনা করা। সঠিকভাবে সংখ্যাটা না জানা গেলেও গবেষকদের ধারণা প্রতিদিন একটি মস্তিষ্ক প্রায় ৭০ হাজার চিন্তা করে। এই চিন্তাশক্তিকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করুন।
মেধা প্রায়ই আমাদের ভিতরে লুকায়িত থাকে। তবুও আমাদের অনেকের মাঝে মেধা মূল্যবান খনিজ পদার্থের মতো ভূ-গর্ভে লুকায়িত থাকে। এসব খনিজ পদার্থকে একমাত্র অভিজ্ঞ ব্যক্তিই খুঁড়ে বের করতে পারে এবং ধুয়ে-মুছে ও ঘষে-মেজে চকচকে করে তুলতে পারে। সুতরাং আমাদের কাজ হলো আমাদের মেধাকে খুঁড়ে তোলা ও তারপর একে উন্নত করা।
আপনার সম্ভাবনাকে খুঁজে বের করুন
আমাদের ব্যর্থতার মূল কারণ হল‒আমরা আমাদের স্বভাবপ্রকৃতির উপর ভিত্তি করে আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারি না। আল্লাহ সবাইকে সম্ভাবনা দিয়ে সৃস্টি করেছেন। কিন্তু আল্লাহ একই সম্ভাবনা সবাইকে দেয়নি। আলাদা আলাদা সম্ভাবনা দিয়েছেন। কারণ আল্লাহ যদি সবাইকে ডাক্তার হওয়ার সম্ভাবনা দিয়ে সৃস্ট করত তাহলে সবাই ডাক্তার হতো। ফলে অন্য সব সেক্টর ফাঁকা হয়ে যেত। এতে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসত। তাই আমাদের উচিত আমাদের সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করে কাজে নামা। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের মাঝে চাকরি ছাড়া কোন সম্ভাবনাই দেখতে পায় না। অথচ আমাদের মাঝে ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, শিল্পী, সাহিত্যিক,
দার্শনিকসহ নানা কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
“যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সেই কর্ম সহজ।”
“ভাগ্যের উপর কর্ম ছেড়ে দিয়ে, হাত গুটিয়ে বসে থাকাকে” রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করে বলেন, আমল বা কাজ করতে থাক। প্রত্যেককে তা-ই সহজ করে দেয়া হবে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। [বুখারী হা/৪৯৪৭।]
আপনার ব্রেন ও স্বভাব প্রকৃতি অনুযায়ী যা সহজ তাই করেন সফলতার জন্য
‒আপনার কাছে যদি জুতা সেলাই সহজ মনে হয়, তবে আপনি মুচি হবেন! আজকের বিখ্যাত যে বাটা জুতা বা স্যান্ডেল দেখছেন, এটার মূল মালিক হলেন টমাস বাটা যিনি পেশায় একজন মুচি ছিলেন।
‒আপনার কাছে যদি কাপড় সেলাই করা সহজ হয় তাহলে গার্মেন্টসে সাধারণ কর্মী হিসেবে চাকরি করবেন। একদিন আপনার নিজের একটি গার্মেন্টস হতে পারে।
‒আপনি যদি মার্কেটিং-এ ভালো হন তবে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কোন কোম্পানীতে স্বল্প-বেতনে চাকরি করবেন। যখন আপনি দক্ষ হবেন তখন যদি নিজের অথবা অন্যকে দিয়ে উৎপাদিত একটি ভালো মানের পণ্য দিয়ে সারা দেশে ব্যবসা শুরু করেন। আর ১৮/২০ কোটি লোকের দেশে প্রতি মাসে ২০ হাজার পণ্য বিক্রি করতে পারেন আর প্রতি পণ্যে ১ টাকা করে লাভ করেন, তাহলে লাভ দ্বারাবে ২০ হাজার টাকা। আমার এ কথা চাপাবাজি মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হল কতিপয় ব্যবসায়ী আমাদের ১৮/২০ কোটি মানুষের সাথে ব্যবসা করে সব টাকা তাঁরা নিয়ে নিচ্ছে। যেমন আমরা সবাই সাবান মাখি কিন্তু এই সাবানগুলো কয়টা কোম্পানী উৎপাদন করছে? হাতে গোনা কয়েকটা কোম্পানী এ কাজ করছে। আমরা প্রতি মাসে গড়ে একটি করে সাবান ব্যবহার করি আর তাঁরা যদি ১ টাকা করে লাভ করে তাহলে আমরা প্রতি মাসে ১৮/২০ কোটি টাকা মাত্র কয়েকটা কোম্পানীকে দিচ্ছি। এভাবে সব পণ্যগুলোর ব্যপারে ভেবে দেখুন। আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন ১৮/২০ কোটি লোকের দেশে কোন পণ্য আর কত ব্যবসায়ী দরকার?