ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বি ও ডি ইউনিট ভর্তি সাজেশন
ভাব-সম্প্রসারণ
v অন্যায় যে করে আরও
অন্যায় যে সহে
তব
ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে।
আইনের দৃষ্টিতে অন্যায়কারীর অপরাধ
দণ্ডযোগ্য। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যায়ের দণ্ড না দিয়ে, অন্যায়ের সাথে আপস
করা হয়; ফলে অন্যায়-প্রবণতা বেড়ে যায়। সুতরাং অন্যায়কারী আর অন্যায় সহ্যকারী
উভয়ই সমান অপরাধী। আদিকাল থেকেই হাতে গোনা কয়েকজন অপরাধীর অপকর্মেই হয়ত খেসারত
দিতে হয়েছে রাষ্ট্রের কিংবা সমাজের সকলের। অন্যায়কারী সমাজের অভ্যন্তরে নানা
দুর্নীতি, উৎপীড়ন এবং অরাজকতা সৃষ্টি করে যেকোনো ব্যক্তির অধিকার হরণ করে তার
নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে। প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধ। সময়ের
পরিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে অপরাধী অসংখ্য অন্যায়ে জড়িত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ নেই। অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। বরং
নিঃশব্দে অপরাধ সহ্য করার মানসিকতা অপরাধের নামান্তর। ক্ষমা একটি মহৎগুণ, কিন্তু
নির্বিচারে ক্ষমা করা অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দেয়। ক্ষেত্রবিশেষে উদারতার কথা
বললেও অন্যায়কে সমর্থন করা হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ না করে বরং
ভীরু কাপুরুষের মত মাথা নত করাই যেন মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। নিজেকে অধিক
নিরাপদে রাখতেই চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অপরাধের কোনো প্রতিবাদ না করে নীরব থাকাও
পরোক্ষভাবে অন্যায়কে সমর্থন করা হয়। অন্যায়কারীরা মানুষের এই দুর্বলতাকে পুঁজি
করে অন্যায়ে উৎসাহ পায়। নানা দল, গোত্রে এবং তথাকথিত রাজনীতিক বলয়ে অন্যায়কারীরা
তাদের ভিতকে মজবুত করে। এরূপ প্রক্ষাপটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ অসহায়
মানুষ। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ অন্যায়কারী কাজে লাগায়। পৃথিবীব্যাপী
উচ্চবিত্তরা, প্রভাবশালীরা একরকম ছাড় দিয়ে অপরাধীদের সাথে বন্ধুত্ব করে। ফলে
মানবসভ্যতায় অন্যায় সয়ে গিয়ে আদৃত হয়। কিন্তু মনুষ্যত্বের বিচারে এই ক্ষমা,
আপস-রফা আর অন্যায়কে মেনে নেওয়ায় শাস্তি পেতেই হবে। বিশ্বে নির্বিঘ্নে অপরাধ
বেড়ে চলছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ঐক্যহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, পুঁজিবাদের
আস্ফালনসহ নানাবিধ কারণে বিশ্বে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। অন্যায়ের
বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যায়কে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে
বেরিয়ে আসতে হবে। বরং অন্যায়কারী আর অন্যায় প্রশ্রয়দানকারী উভয়ই সমান অপরাধী-
এ স্নোগানে বিশ্ববিবেক জাগাতে হবে।
v বার্ধক্য তাহাই – যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে।
কেবল বয়সের মাপকাঠিতে তারুণ্য বা বার্ধক্যকে বিচার করা যায় না।দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ও কর্মস্পৃহার তারতম্য মানুষকে তরুণ ও বৃদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করে। মানুষ শৈশব, কৈশোর,তারুণ্য ও যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়।এ বার্ধক্য ব্যক্তির নানা ধরনের শারীরিক সক্ষমতা হ্রাস করতে পারে ঠিকই,কিন্তু সবাইকে মানসিকভাবে জরাগ্রন্ত করতে পারে না। এদের কর্মশক্তি ও মানসিক-শক্তি অনেক তরুণকে হার মানায়। পক্ষান্তরে, এমন অনেক তরুণ রয়েছে - যারা নতুনকে গ্রহণ করতে পারে না, অন্ধবিশ্বাস ও গতানুগতিক চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকে,সত্যকে দ্বীকার করতে কুষ্ঠিত হয়। তারা আসলে তারুণ্যের খোলসে বার্ধক্যকে লালন করে। আর যেসব বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়, ইতিবাচক ভাবনায় জীবনকে পরিচালিত করে, তারা প্রকৃতপক্ষে তারুণ্যের অমিতশক্তি ধারণ করে। তরুণরা সব সময়ে আলোর পথের যাত্রী। কঠিন সত্যকে মেনে নিয়ে তারা নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারে। যুক্তির আলোয় কুসংস্কারকে বাতিল করে তারা প্রতিষ্ঠা করে নতুন সত্য। তারা ধ্বংস ও মৃত্যুকে পিছনে ফেলে সৃষ্টির আনন্দে এগিয়ে যায়। তারুণ্যের এই বোধ ও অনুভূতি যে কোনো বয়সের মানুষের মধ্যে থাকতে পারে। প্রকৃত বৃদ্ধ তারা, যারা তারুণ্যের দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নিতে চায় না, সমাজ ও সংস্কৃতির পরিবর্তনকে অদ্বীকার করে, নতুন সূর্যের আলোয় অন্বন্তিবোধ করে। তারা তারুণ্যের অগ্রযাত্রায় অংশ নেওয়ার পরিবর্তে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। বার্ধক্যের পরিচয় বয়সে নয়, পশ্চাদমুখী দৃষ্টিভঙ্গিতে।
v ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী
গদ্যময়;
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।
ক্ষুধার্থ মানুষের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা
ক্ষুন্নিবৃত্তি। সব কিছুর মধ্যেই সে
ক্ষুধা নিবারণের কথা ভাবে। তখন তার কাছে ভাল-মন্দের প্রভেদ করার হিতাহিত জ্ঞান
থাকে না। প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কতগুলো মৌলিক চাহিদা রয়েছে। খাদ্য
হলো এর মধ্যে প্রধান মৌলিক চাহিদা। খাদ্য ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। মানুষের শরীরে
তৈরি হওয়া এই খাদ্যের চাহিদারই অপর নাম ক্ষুধা! ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য মানুষ সব কিছু
করতে পারে। মানুষ যে দিবারাত্রি কঠোর পরিশ্রম করে, তার পেছনে এই ক্ষুন্নিবৃত্তিই মূল চালিকাশক্তি।
ক্ষুধা নিবৃত্ত হওয়ার পরেই মানুষ অন্যান্য মৌলিক চাহিদার কথা ভাবে। বাসস্থানে কথা
ভাবে, পোশাকের কথা ভাবে, স্বাস্থ্যের কথা ভাবে। সুন্দর এবং অসুন্দরের কথা ভাবে একেবারে
শেষ পর্যায়ে। তাই ক্ষুধা যখন মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়,
তখন সৌন্দর্যের মূল্য তার কাছে থাকে না। একজন সুখী মানুষে কাছে পৃথিবীকে সুন্দর মনে
হতে পারে। কিন্তু ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে তা নাও হতে পারে। অতীতে প্রায়ই দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। হাজার হাজার মানুষ খেয়ে মারা
যেত। সামান্য দুটো রুটির জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষকে সারাদিন পরিশ্রম করতে হতো। সেই দুর্ভিক্ষে
একজন শ্রমজীবীর কাছে পূর্ণিমার চাঁদ বড় জোর একখানা ঝলসানো রুটির মতো মনে হবে, সেটাই
স্বাভাবিক। ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৃথিবীর সৌন্দর্য কোনো তাৎপর্য বহন করে না। ক্ষুধা
নিবারণের জন্য তার সবচেয়ে আগে দরকার খাদ্য। গদ্যের কাঠিন্যটুকু সে ভালো উপলব্ধি করতে
পারে; কাব্যের কোমলতা তার কাছে অর্থহীন।
v গ্রন্থগত বিদ্যা আর
পরহস্থে ধন,
নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।
ধন-সম্পদ যদি নিজের নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে দরকারের সময়ে তা কোন কাজে আসে না। একইভাবে জ্ঞান যদি শুধু বইয়ের পাতায় আটকে থাকে, সে-বিদ্যা ব্যক্তি তার নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারে না। মানুষের অভিজ্ঞতা ও প্রমাণ-লব্ধ জ্ঞান বইয়ের মধ্যে সঞ্চিত থাকে। বই পাঠ করলে পৃখিবীর সব ধরনের জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। কেউ যদি নিয়মিত বই পড়ে তাহলে সে ধীরে ধীরে নিজেকে জ্ঞানী করে তুলতে পারবে। বই থেকে অর্জিত এই জ্ঞান দিয়ে সে নিজের বা অন্যের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। বই থেকে অর্জিত জ্ঞান থেকে সে নিজে যেমন আলোকিত হতে পারে, অন্যকেও আলোকিত করতে পারে। কিন্তু জ্ঞান যদি বইয়ের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তা কারো কোনো কাজে আসে না। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে হাজার হাজার বই কিনলেন আর তা দিয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করলেন। লাইব্রেরির তাকে তাকে বইগুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখলেন । কিন্তু জ্ঞানের কোনো বিষয়ে কেউ যদি তাকে প্রশ্ন করে, তিনি তার যথাযোগ্য জবাব দিতে ব্যর্থ হবেন। আবার বইয়ের বিদ্যা না বুঝে কেবল ঠোঁটস্থ বা মুখস্থ করলেই হবে না। এই বিদ্যার প্রায়োগিক দিকটিও উপলব্ধি করতে হবে। অনেকটা জায়গা-জমি বা অর্থের মতো ব্যাপার। নিজের জমি অন্যের কাছে রেখে যদি কেউ ভাবে তার জমি আছে সেটা যেমন অনর্থক ঠিক জ্ঞান শুধু বইয়ের পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে কোন লাভের লাভ হবে না। বইকে শুধু পরীক্ষায় পাশের যন্ত্র ভাবলে চলবে না, বইয়ের পড়াকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হবে।
v জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো
কর্মের দ্বারাই
মানুষ পৃথিবীর বুকে সম্মান ও প্রতিষ্ঠা পায়। কোনো মানুষের জন্য যে বংশেই হোক না
কেন, কাজই তার পরিচয় নির্ধারণ করে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী মানুষকে
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। তখন পিছনে পড়ে থাকে তার ভালো-মন্দ সব ধরনের কাজ
ইতিবৃত্ত। কাজ ভাল হলে বহু কাল যাবৎ মানুষ তা মনে রাখে। আর কাজ খারাপ হলে যুগ যুগ
ধরে সকলে তার নিন্দা করে। বংশমর্যাদার উপরে এইসব সুনাম বা দুর্নাম নির্ভর করে না।
বংশে কেউ একজন সুনাম করলে সেই বংশের মর্যাদা হুড়হুড় করে বাড়ে। তবে তার অর্থ এই
নয় যে,এই মর্যাদা চিরস্থায়ী। কেননা, এই বংশে কোনো কুলাঙ্গার জন্ম নিলে সেই
মর্যাদায় গুড়ে বালি পড়তে পারে। আবার, অনেকে খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়েও নিজ
নিজ কৃতিত্বের জন্য পৃথিবীতে অমর হয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, করেছেন, আবার
কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেছেন দরিদ্র পরিবারে। এ দুজন ব্যক্তি বংশ পরিচয়ে
নয়, বরং কর্ম দ্বারা মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছেন। মানুষের পরিচয় কখনোই তার বংশ
বা পরিবারের মর্যাদা-অমর্যাদার উপর নির্ভর করে না -নির্ভর করে তার নিজ নিজ কর্ম ও
সুকৃতির উপর। বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প, মানবসেবা - পছন্দসই যে কোনো ক্ষেত্রে মানুষ
নিজেকে উৎসর্গ করে অমর হতে পারে।
v দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য বা চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ।
দুর্জন মানে খারাপ লোক। খারাপ
লোক যতই শিক্ষিত হোক না কেন তার সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত। সাধারণত
মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিপরায়ণ ও চরিত্রহীন লোককে এককথায় দুর্জন বলা হয়। যারা খারাপ
লোক, তাদের কথায় ও আচরঙ্গে খারাপ স্বভাব প্রকাশ পায়। খারাপ লোক শিক্ষিত হতে
পারে, উচ্চশিক্ষিত হতে পারে; আর নিরক্ষরও হতে পারে। অর্থাৎ কারো খারা হওয়ার সঙ্গে
শিক্ষিত হওয়া বা না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। যারা খারাপ লোকের সঙ্গে মেশে, তাদের
সবাই খারাপ লোক মনে করে। এজন্য খারাপ লোকের সঙ্গ ত্যাগ করতে হয় এবং তেমন লোকের
কাছ থেকে দূরে থাকতে হয় । বিষধর সাপের মহামূল্যবান ও অনেক দামী মণি থাকলেও কেউ
সেটি আনার সাহস করে না; কারণ সেটি আনতে গেলে জীবননাশের শঙ্কা থেকে যায়। তেমনি
দুর্জন লোক শিক্ষিত হলেও তার সঙ্গ পরিত্যাগ করা উচিত কারণ তার দ্বারা উপকার হওয়ার
চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। দুর্জন লোক অপরের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কখনো
পায় না। তার কাছ থেকে সঙ্গীর কিছু শেখার নেই। এমনকি, দুর্জনের কারণে সঙ্গীর বিপদও
হতে পারে। বিপরীতভাবে, ভালো লোক নিরক্ষর হলেও তার সঙ্গ প্রীতিকর হয়। ভালো লোকের
কাছ থেকে তার সঙ্গীর বিপদ ঘটার সম্ভাবনা থাকে না। সচ্চরিত্র গঠন করা বিদ্যা অর্জন
করার চেয়েও কঠিন কাজ। তাই যিনি চরিত্রবান, তার বিদ্যা থাক বা না-থাক, তার সঙ্গ
প্রত্যাশিত। অন্যদিকে চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা
ক্ষতিকর।
v প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন থাকলেই মানুষ হয় না।
খাদ্য গ্রহণ করে, শারীরিকভাবে বাড়ে আর বংশ বৃদ্ধি করে -মোটামুটি এসব বৈশিষ্ট্য থাকলে কোনো কিছুর প্রাণ আছে বলে মনে করা হয়। মানুষেরও প্রাণ আছে, কিন্তু মানুষের থাকে এর অতিরিক্ত আর একটি সত্তা, তা হলো মন।। মানুষকে বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব - সেরা প্রাণী। মূল কারণ তার মন আছে। এই মনের মাধ্যমে মানুষ তার চারপাশের জগতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে। তার মধ্যে ভালো-মন্দের ধারণা সৃষ্টি করে, নৈতিকতার জন্ম দেয়। এমনকি এই মন দিয়ে সে গড়ে তোলে তার নিজস্ব সংস্কৃতি। এই সাংস্কৃতিক বোধ থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক উপাদান। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে এইসব উপাদান থাকে না। ইতর প্রাণীর মন থাকে না বলে তার সংস্কৃতি নেই, তার ভালো-মন্দের বোধ নেই, তার নৈতিকতার বালাই নেই। মানুষের মন এভাবে অন্যান্য প্রাণী থেকে তাকে আলাদা করে। মনকে আবার অনেক সময়ে ভালো কিছুর কেন্দ্র হিসেবেও ভাবা হয়। যেমন, যখন কোনো ব্যক্তিত্ব দানশীলতার কথা বলা হয়, তখন বলা হয়, তার মন আছে। আবার কোনো লোককে যখন চরমস্বার্থপর ও কৃপণ হিসেবে চিত্রিত করার দরকার হয়, তখন বলা লোকটার মন ছোট। এদিক দিয়ে মন হলো মানুষের ভালো-মন্দ পরিমাপের একটি দাঁড়িপাল্লা। মানুষের মন আছে বলেই সে মানবিক গুণের অধিকারী। আর যার মন নেই, অবশ্যই সে ইতর প্রাণীর সঙ্গে তুলনীয়। সেই ইতর প্রাণী হতে পারে চরমভাবে হিংস্র অথবা একান্তই গোবেচারা কোনো পশু, পাখি বা মাছ ।
(চলবে...)
সারাংশ
ü এ কথা নিশ্চিত যে, জনসংখ্যার উর্ধ্বগতি...সম্ভাবনাময়
বিশাল জনশক্তির অপচয় ঘটানো।
জনসংখ্যার অধিক বৃদ্ধি দেশের
উন্নতির অন্তরায়। এতে সমাজ ও পারিবারিক জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির
ফলে মানুষ শিক্ষার মতো সামাজিক অধিকার পায় না। ফলে দেশের বিপুল জনশক্তির অপচয় ঘটে।
ü বিদ্যা মানুষের মূল্যবান সম্পদ...দুর্জনের নিকট গমন
বিধেয় নহে।
বিদ্যা মূল্যবান বটে, তবে
চরিত্রের মূল্য আরো বেশি! যার চরিত্র ভালো নয়, তার জ্ঞান দিয়ে কোনো ভালো ফল আশা করা
যায় না। সাপের মাথায় মণি থাকলেও তা ভয়ংকর; চরিত্রহীন বিদ্ধান হলেও তার সঙ্গ পরিত্যাগ
করা উচিত।
ü সমাজের কাজ কেবল...আন্তরিকতাহীন ও উপলব্ধিহীন বুলি
মাত্র।
সমাজ একটি সামবায়িক সংগঠন।
সমাজ গঠনের উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এখানে ভালো-মন্দ উভয় শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি থাকে।
অহংকারী ও স্বার্থপর মানুষ সমাজে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে না, বরং অগ্রযাত্রায়
প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
ü মাতৃস্নেহের তুলনা নেই...ভীরুকে রক্ষা করতে ব্যস্ত
হয়।
অতিরিক্ত
মাতৃস্নেহ সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক নাও হতে পারে। অধিক মাতৃস্নেহে সন্তানের মধ্যে
স্বনির্ভরতা আসে না; সে অসহায় হয়ে পড়ে। অন্ধ মাতৃস্নেহ দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেয়।
ü অভ্যাস ভয়ানক জিনিস...সব পণ্ড হবে।
মানুষ অভ্যাসের দাস। কোনো
অভ্যাসকে একদিনে বদলানো যায় না। অভ্যাস বদলানোর জন্য নিয়মিত চেষ্টা করতে হয়। নিজেকে
চরিত্রবান করতে চাইলে ধীরে ধীরে মিথ্যাচার ত্যাগ করার চেষ্টা করতে হবে।
ü মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল...মানবহৃদয়ের বন্যাকে
বাঁধিয়া রাখিয়াছে!
লাইব্রেরির সঙ্গে নীরব মহাসাগরের
তুলনা করা যায়। যুগ যুগ ধরে অগণিত জ্ঞানী-গুণী মানুষের চিন্তা ভাবনা বইয়ের পাতায়
পাতায় স্থায়িত্ব লাভ করে। মানুষের অর্জিত জ্ঞান এই বইয়ের মাধ্যমে লাইব্রেরিতে সঞ্চিত
হয়ে আছে।
ü মানুষের মূল্য...চরিত্রবান মানে এই।
চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান
ও কর্ম মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ করে। চরিত্রগুণেই মানুষ অন্যের শ্রদ্ধা লাভ করতে পারে।
যিনি সত্যবাদী, বিনয়ী, জ্ঞানী, পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ, স্বাধীনতাপ্রিয় ও সজ্জন তিনিই
চরিত্রবান।
ü আজকাল বিজ্ঞানের দ্বারা...তিল তিল করিয়া বাড়িতেছে।
বর্তমান সভ্যতায়
বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির পিছনে রয়েছে অগণিত
মানুষের নিরন্তর কর্মপ্রচেষ্টা। মানুষের কর্মপ্রচেষ্টায় যুগ যুগ ধরে নানা
আবিষ্কার ও উদ্ভাবনে এই সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছে।
ü তুমি বসন্তের কোকিল...শীত বর্ষার কেহ নও।
সুবিধাবাদীদের
উপস্থিতি সুসময়ে দেখা যায়। দুঃখের দিনে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রয়োজনের
সময়ে এই সুসময়ের বন্ধুরা কোনো উপকারে আসে না।
ü অভাব আছে বলিয়া...সার্থকতা লাভ করিয়াছে।
জীবনে অসম্পূর্ণতা
আছে বলেই মানুষ পূর্ণতার খোঁজ করে। অভাব দূর করার জন্যই সে কর্মপ্রচেষ্টায় রত
থাকে। আবার কিছু মানুষ অন্যের অভাব পূরণের মধ্য দিয়ে মহান হয়ে ওঠে।
(সমাপ্ত)